প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে সাথে দৈনন্দিন জীবনে আমরা যতটা না নিজেদের বন্ধুদের চিনি তার থেকে বেশি চিনি আমাদের ভার্চুয়াল/কাল্পনিক জীবনের বন্ধুদের।
আয়নাতে যেমন মানুষ তার প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় ঠিক তেমনি আরেকটি প্রতিচ্ছবি এযুগে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো।
এই দিকগুলো ভাল নাকি মন্দ আমাদের জন্য, সেটা না হয় নিজ চিন্তাতেই বিবেচনা করা যাক। কেননা এক একজনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি এক এক রকম।
প্রোগ্রামার কিংবা ডেভেলপার যারা সোস্যাল মিডিয়ার উন্নয়নে তাদের শ্রম ব্যয় করছেন তাদের কাছে এটি একটি সফল প্রোজেক্ট বলা চলে। একজন ব্যবসায়ী তার পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য উপযুক্ত কাস্টমার হাতে পাওয়ার মাধ্যমও সফল হতে পারেন। এক্ষেত্রে কাস্টমারের কোনটা ভাল কোনটা খারাপ এই জিনিসটা ব্যবসায়ীর দেখলে চলে না।তার প্রধান লক্ষ্য থাকে তার পণ্যকে বাজারে সফল করা।
অন্যদিকে একজন কাস্টমার কিংবা ইউজার হিসেবে আমরা কী পাচ্ছি আর কী হারাচ্ছি সেটাই মূখ্য বিষয়।
আমরা আমাদের প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত তথ্য কাদের হাতে কীভাবে দিচ্ছি!
একটি বারও কী মনে হয়না? আমরা পার্সোনাল মেসেজে চ্যাট করলে সেটা কোথায় জমা থাকে? চ্যাটে যাই করিনা কেন সেটা মুছে ফেলার করার পর আদৌ কী মুছে যায়?
আসুন সহজভাবে বুঝাই। আমরা কমবেশি সবাই কম্পিউটারের “রিসাইকেল বীন” -এর সাথে পরিচিত। প্রাথমিক লোকেশন থেকে কোনো তথ্য মুছে ফললে সেটা রিসাইকেল বীনে জমা হয় যা রিস্টোর করে আবার ফেরত আনা সম্ভব। কিন্তু যদি রিসাইকেল বীন থেকেই মুছে যায় তবে কী তা ফেরত আনা সম্ভব?
আরেকটি উদাহরণ দেইঃ
আমাদের ঘরে ময়লা,ধুলোবালি থাকলে সেটা পরিষ্কার করি। ডান্সটবিনে ফেলে দেই। ডাস্টবিন থেকে সে ময়লা কোথায় যায়? আমরা কতটুকু কি নিশ্চিত সেই ময়লা আমাদের ঘরে উড়ে এসে আবার ঢুকবে না! (হাস্যকর লাগতে পারে। হতেই পারে সেই ময়লা ঘরে আবার আসবে এটা জিজ্ঞেস করার কি আছে!!)
জ্বী!! ঠিক ধরেছেন। পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই কোনো না কোনোভাবে রিসাইকেল করা সম্ভব। অনেকে ডেটা রিকভারি টুলের নাম জেনে ত্থাকবেন যেটা দিয়ে কিনা ওই রিসাইকেল বীন থেকে মুছে ফেলা তথ্যও পুনরুদ্ধার সম্ভব। অর্থাৎ, যে তথ্য একবার তৈরি হয়ে যায় সেটা চীরতরে মুছে ফেলা অনেকটা অসম্ভব।
তাহলে একবার ভেবেই দেখুন! যেখানে নিজের ব্যক্তিগত কম্পিউটার আমাদেরকে ধোঁকা দিতে পারে সেখানে এইসকল সোস্যাল মিডিয়াও কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে!
তাই আশা করব তথ্য শেয়ারের ক্ষেত্রে আমরা একটু হলেও সচেতন হবো। নিজে সচেতন হবো ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করে গড়ে তুলবো।
কথায় আছে “চোরের মার বোড় গলা”। তাই চোরের মাদের গলাটা আরেকটু বড় হওয়ার আগেই রিয়েল লাইফের চোর থেকে যতটা সবধানতা অবলম্বন করা হয় ডিজিটাল চোরের ক্ষেত্রেও ঠিক ততটাই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।