শাওমির ৯ বছরের পথচলা

বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন মার্কেটে তুমুল জনপ্রিয় ব্র‍্যান্ড শাওমি। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে শাওমির আলাদা কদর রয়েছে। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া চীনা এই ব্র‍্যান্ডটি খুব অল্প সময়েই পেয়েছে অভাবনীয় সাফল্য। কিভাবে এই ব্র‍্যান্ডটির যাত্রা শুরু হলো?কিভাবে তারা এতো অল্প সময়ে এতো জনপ্রিয়তা পেলো? চলুন জেনে নেয়া যাক-

শাওমি বা মি প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৬৯ সালে জন্মগ্রহণ করা চীনা নাগরিক Lei jun. ১৯৯২ সালে তিনি কিংসফট কোম্পানিতে একজন প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৮ সালে কিংসফট এর CEO এর দায়িত্ব পান। ২০০০ সালে তিনি yoho.com নামে বই বিক্রির একটি অনলাইন প্লাটফর্ম দাড়া করান। এতে তিনি ভালো সাফল্য পান। ২০০৪ সালে এমাজন তার এই কোম্পানিটি কিনে নেয় ৭৫ মিলিয়ন ডলারের ($) বিনিময়ে। ২০০৭ সালে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি কিংসফট থেকে পদত্যাগ করেন।
কিংসফট ত্যাগ করার পর তিনি বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা শুরু করেন। ইউসি ওয়েব, Vancl সহ ছোট বড় প্রায় বিশ টি কোম্পানিতে তিনি বিনিয়োগ করেন। ২০১১ সালে তিনি আবার কিংসফট এর চেয়ারম্যান হিসেবে ও ২০১৪ সালে সেরা ব্যাবসায়ী হিসেবে তার নাম “ফোর্বস” এর পাতায় উঠে।

এবার জানা যাক শাওমির পথচলা নিয়ে-

শাওমি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে। Lin Bin, Dr Zhou এর মত মোট আট জন বাঘা বাঘা প্রযুক্তিবিদদের সাথে নিয়ে Lei jun শাওমি প্রতিষ্ঠা করেন।

যেকোনো কোম্পানির শুরুতেই সবচেয়ে দরকার হলো আইডিয়া (যেটা তাদের ছিলো) এবং বিনিয়োগ। তিনি হংকং এবং চীনা প্রতিষ্ঠান থেকে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পান। শুরুর দিকে শাওমি ছিলো একটি সফটওয়্যার নির্মাতা কোম্পানি। তারা এনড্রয়েড বেইজড কাস্টম রম নিয়ে কাজ করছিলো। গুগলের স্টক এনড্রয়েডের সাথে আরো প্রয়োজনীয় নতুন নতুন ফিচার যোগ করে তারা তৈরি করে এনড্রয়েড বেইজড কাস্টম রম MIUI. MIUI এর ফিচার ও নতুনত্বের কারণে। এনড্রয়েড ব্যাবহারকারীদের মধ্যে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। সফটওয়্যারের পাশাপাশি তারা হার্ডওয়্যার নিয়েও কাজ করছিলো। ২০১১ সালে শেষের দিকে তারা চিন্তা করে আমরা যদি আমাদের রমটা আমাদের নিজেদের তৈরি ডিভাইসে টেস্ট করি কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ, ২০১১ সালেই তারা তাদের নিজদের প্রথম ডিভাইস MI 1 তৈরি করে। ফোনটিতে ছিলো তখনকার টপ স্পেক এবং দাম ছিলো সাধ্যের মধ্যে। সেই শুরু থেকে আজকের দিন পর্যন্ত শাওমি এই নীতি অনুসরণ করে এসেছে। MI 1 এর পরবর্তী জেনারেশন MI 2 তে ব্যাবহার করা হয়েছিলো কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন S4 Pro চিপসেট।

যা ছিলো তখনকার সময়ের স্মার্টফোনের জন্য সেরা চিপসেট। শাওমি স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সাফল্য পায় MI 3 দিয়ে। ২০১৩ সালে এই ডিভাইসটির সাথে তারা বাজারে ছাড়ে তাদের প্রথম স্মার্ট টিভি। প্রোডাক্ট এর ক্ষেত্রে তারা ডাইভার্স পোর্টফলিও অনুসরণ করে। অর্থাৎ স্মার্টফোনের বাইরেও তারা বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইস তৈরি ও বিক্রি করে। এই প্রোডাক্টের তালিকায় আছে ইয়ারফোন, স্পিকার, পাওয়ার ব্যাংক, স্মার্ট রোবট, টুথব্রাশ, সানগ্লাস সহ আরো অনেক কিছু। ২০১৪ সালে MI 3 স্মার্টফোনটি দিয়ে তারা ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করে। প্রথম ফোনটি দিয়েই তারা বাজিমাত করে ভারতের বাজারে। ফ্লিপকার্টের সাথে পার্টনারশীপে তারা ফোনটির বিপণন করে। মাত্র ৪.২ সেকেন্ডেই তারা ১ লাখ ফোন বিক্রি করে। সেই থেকে ইন্ডিয়ান মার্কেটে তাদেরকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শাওমি এখন ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বিক্রিত স্মার্টফোন। দেশটির প্রায় ২৭.৩% (১৫.১১.২০১৮, বিজনেস টুডে) মোবাইল মার্কেট শেয়ার দখন করে আছে কোম্পানিটি। গ্যাজেটের দিক থেকেও ভারতীয় বাজারে তাদের আধিপত্য রয়েছে। শুধু ভারত এবং চীন নয়। গ্লোবাল মার্কেটেও শাওমির জনপ্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। কোম্পানিটির এখন প্রায় ১৮০০০ কর্মী আছে। গ্লোবাল মার্কেট শেয়ারের দিক থেকে তারা আছে চতুর্থ স্থানে। ১ বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট দিয়ে শুরু করা কোম্পানিটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
শুধু টাকার হিসেবেই নয়। টেক দুনিয়ায় নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে। এই পথ চলায় শাওমি অর্জন করে নিয়েছে কোটি কোটি মানুষের মন।

২০১০ সালের আজকের দিনে যাত্রা শুরু করেছিলো “চীনের অ্যাপল” খ্যাত শাওমি। শুভ জন্মদিন শাওমি। ❤

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Previous Post

Tapet – নিজের তৈরি ওয়ালপেপারে সাজান নিজের প্রিয় ফোনটিকে!

Next Post

আসছে গরীবের পিক্সেল

Related Posts