মোবাইল ডিসপ্লে কোনটা ভালো? AMOLED vs IPS LCD vs OLED vs Retina

আমরা যখন মোবাইল কিনি তখন বেশিরভাগ মানুষ যে জিনিষ দেখে কিনে তা হচ্ছে স্মার্টফোনের র‍্যাম, ইন্টার্নাল স্টোরেজ কিংবা ক্যমেরা অথবা ব্যাটারি ব্যাকাপ বেশী দেয় কোন ফোন। আরেকদল আছে যারা পারফরম্যান্স দেখে ফোন কিনে। কিন্তু স্মার্টফোন এর ডিসপ্লে সেকশন কে প্রায় সবাই এড়িয়ে যায়। কিন্তু একজন মোবাইল ব্যবহারকারীর সাথে মোবাইলের সংযোগ স্থাপন করে মূলত এই ডিসপ্লে বা স্ক্রিন। তবে কেন এড়িয়ে যাই এই জিনিষ? চলুন আজকে আলোচনা করি স্মার্টফোন এর সবথেকে বেশি যে জিনিসের সাথে আমাদের সম্পর্ক সবথেকে ক্লোজ তার সম্পর্কে। মাল্টিমিডিয়া বা মুভি দেখার জন্য কোন ডিসপ্লে ভালো? চোখের জন্য কোন ডিসপ্লে ভালো সবই থাকবে আজকের আলোচনায়। তো শুরু করা যাক?

মোবাইলের ডিসপ্লে কোনটা ভালো?

IPS LCD Display

এলসিডি ডিসপ্লে পূর্ণরূপ liquid-crystal display ( লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে ) । নাহ এই ডিসপ্লের ভেতরে লিকুইড কিছু থাকেনা । বর্তমানে দুই ধরনের LCD Display মার্কেট জনপ্রিয়। একটা TFT LCD বা Thin Film Transistor LCD । তো এই ডিসপ্লের ফোন এখন খুব বেশি নেই। TFT ডিসপ্লে এর কোয়ালিটি তেমন ভালো নাহ। ছবি দেখলে শার্প মনে হবেনা। ভিউ এঙ্গেল ও খারাপ। তাই বর্তমানে TFT LCD ডিসপ্লের ফোন খুব বেশি নেই। তবে বর্তমানে বাজারে শেয়ারের একটা বড় অংশ দখল করে আছে IPS LCD স্ক্রীনের ফোন। বলতে গেলে বেশিরভাগ ফোনের ডিসপ্লে IPS LCD । TFT থেকে অনেক পাতলা এই ডিসপ্লে প্যানেল গ্রাহকদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। একে LCD Display এর বেস্ট ভার্সন বলা যেতে পারে। এতে তিনটি জিনিষ মাথায় রেখে বানানো হয়।

  • কালার
  • ভীও এঙ্গেল
  • অনেক পাতলা

IPS LCD ডিসপ্লে তে কালার একদম বাস্তবে যেমন তেমন করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। ওভার সেচুরেশন এর কোন ব্যাপার এখানে থাকেনা। তবে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় কালো রঙ এর সময়। IPS ডিস্পলে যখন কাজ করে তখন সম্পূর্ণ স্ক্রীন টাই অন রাখতে হয়, তাই চাইলেও একদম কালো রং এর দিতে পারে নাহ। কালো রং ডার্ক গ্রে এর মত দেখায়। View Angle বলতে বুঝানো হয় ডিসপ্লে কোন পাশে থেকে কেমন দেখায়। IPS এ ১৭০+- ° পর্যন্ত দেখা যায় ভালই। LCD ডিসপ্লের এই ভার্সন TFT থেকে অনেক বেশি পাতলা করা হয়েছে , এই কারণেই আমাদের বর্তমান যুগের ফোনগুলো বেশ পাতলা।

OLED Display Technology

OLED ডিসপ্লে যখন মার্কেটে আসে তখন দারুন একটা পরিবর্তন নিয়ে আসে। আমরা LCD ডিসপ্লে তে দেখেছি যে যখন স্ক্রিনে কিছু দেখানো হয় তখন সম্পূর্ণ স্ক্রিনটা অন রাখতে হয়। OLED টেকনোলজি এসে এই থিওরি কে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়। এখানে কি হয়, আপনি ডিসপ্লের ঠিক যে অংশে কোন কিছু দেখছেন, একদম সেইটাই শুধু লাইট আপ হয়। ফলে বাকি অংশ একদম সম্পূর্ণ কালো দেখায়, তাই এমন ডিসপ্লে কে একদম জীবন্ত মনে হয়।

IPS নাকি AMOLED? কোন ডিসপ্লে ভালো?

বিষয়টা আমি আরো ক্লিয়ার করি, ধরুন আপনি আপনার ডিসপ্লে তে Deshi Droid লেখাটা দেখছেন, আর কিছু নেই। সাদা আর লাল রং এর দেশী ড্রয়েড লেখার পেছনের ব্যকগ্রাউন্ড কালো। তো এইটা যখন আপনি OLED ডিসপ্লেতে দেখানো হয় তখন শুধুমাত্র Deshi Droid লেখাটার অংশটাই ব্যাটারি ইউজ করে জ্বলবে, বাকি সব একদম কালো থাকবে, মানে ডিসপ্লে ওই জায়গায় বন্ধ আছে। এমনি D এর ভেতরে যে ফাঁকা জায়গা সেটাও বন্ধ থাকবে। তো আপনার মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে যে এইটা কি করে সম্ভব। এই কাজ সম্ভব করেছে যেভাবে সেটা বলি। OLED টেকনোলজিতে আপনার ফোনের প্রত্যেকটা পিক্সেল কে আলাদা আলাদা LED লাইট হিসেবে রেসপন্স করে। ফলে যে জায়গায় যে রং দরকার সেইটাই দেখায়। ফলে বাকি স্ক্রীন এ লাইট থাকেনা। তাই এই ডিসপ্লে অনেক বেশি ভালো কালার দেখাতে পারে। আর অনেক সময় দেখবেন OLED ডিসপ্লের যে ফোনগুলো সেইগুলোতে ডিসপ্লে কালো করে রাখলে চার্জ কম যায়। এইটার পেছনে কারণে হলো কালো রং এর জন্য তো আমাদের LED অন করতে হচ্ছে নাহ, তাই চার্জ ও যাচ্ছে নাহ। এই স্ক্রিনে Black Pure Black আসে। তাই এইসব ডিসপ্লে তে কনট্র্যাক্ট রেশিও অনেক ভালো আসে।

AMOLED Super Amoled স্ক্রীন কি?

OLED এর একটা ভার্সন হচ্ছে AMOLED আরেকটা POLED । স্যামসাং বানায় AMOLED , LG বানায় POLED । AMOLED , Super Amoled মূলত মার্কেটিং টার্ম সাথে হালকা ইমপ্রুভমেন্ট ।

রেটিনা ডিসপ্লে কি?

আইফোন শুধু তাদের ফোন এ যে ডিসপ্লে ইউজ করে তার নাম দিয়েছে Retina Display । এরা মূলত প্রথম দিকে অনেক বেশি পিক্সেল ডেনসিটি দিয়ে এই নাম দেয়। এখন প্রায় সবাই একই ডেনসিটি ব্যবহার করে। Apple বর্তমানে Super Retina XDR OLED ব্যবহার করে। যা মূলত OLED টেকনোলজি।

কোন ডিসপ্লে বেশী ভালো?

যদি আমরা AMOLED vs IPS চিন্তা করি তাহলে IPS এ একদম ট্রু কালার দেখায়, মানে আপনি একটা জিনিসকে বাস্তব জীবনে যেমন দেখবেন তেমন দেখায়, কিন্তু AMOLED এ আরেকটু বেশী কালার দিয়ে সুন্দর দেখায়। তাই AMOLED ডিসপ্লে তে সব কিছুই দারুন লাগে। কিন্তু IPS এর কালার একদম রিয়েল লাইফ কালার। চোখের জন্য IPS Display ভালো

AMOLED এ ডার্ক মুড ইউজ করলে ডিসপ্লে অনেক কম চার্জ ব্যাবহার করে। IPS LCD ডিসপ্লে তে ডার্ক ওয়ালপেপার বা ডার্ক মুড এর কোন ফায়দা আসলে নেই।

যদি বলেন কোন ডিসপ্লের ব্রাইটনেস বেশি তাহলে সেখানে সবথেকে বেশি ব্রাইট AMOLED । AMOLED স্ক্রীন সবথেকে পাতলা, OLED টেকনোলজির কারণেই এত পাতলা ফোন বানানো সম্ভব হয়েছে। যদি কখনো AMOLED ডিসপ্লে কখনো খুলে দেখেন, তাহলে টাচ ছাড়া খালি ডিসপ্লে টা দেখবেন একদম পাতলা প্লাস্টিক এর মত।

কোন ডিসপ্লের দাম বেশি ? এইটা বড় একটা প্রশ্ন। কারণ আমাদের অনেক সময় ফোনের ডিসপ্লে পাল্টানোর দরকার হতে পারে। AMOLED ডিসপ্লের দাম অনেক বেশি । IPS সাধারণত কম দামী হয়। এইটা নিয়ে একটা মজার ঘটনা মনে পড়ে আমার। আমার এক বন্ধু একবার Samsung J2 কিনে ৮ হাজার টাকা দিয়ে। ভালো ফোন চলছে বেশ ভালো। তো একদিন ডিসপ্লে ভেঙ্গে যায়, সে দোকানে স্ক্রীন রিপ্লেস করতে গিয়ে শুনে তার ডিসপ্লের দাম ফোনের থেকে বেশি। ৮ হাজার টাকার ফোন এর ডিসপ্লে ঠিক করতে শুধু ডিসপ্লের দাম ১২ হাজার টাকা।

তো আজকে এই পর্য়ন্তই, দেখা হবে অন্যিকোনদিন অন্য কোন টপিকে। আমাদের এই লেখা শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু ।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Previous Post

প্রোগ্রামিং ভাষা কী?

Next Post

ব্ল্যাক ফ্রাইডে উপলক্ষে ৬০% পর্যন্ত ছাড়ে হোস্টিং দিচ্ছে cornQ

Related Posts

[TechSa #5] স্মার্টফোনের যাবতীয় সেন্সর সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বর্তমানে মোবাইল ফোন শুধুমাত্র কথা বলা ও ছবি তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এইগুলো ছাড়াও মোবাইল ফোন অনেক এডভান্স…
পড়ুন